দেলোয়ার হোসেন
ঋতু চক্রের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ।
ছয়টি ঋতুর বিচিত্র রূপের মধ্যে আমরা ডুবে থাকি সারাটি বছর। একটা ঋতুর
মনোমুগ্ধতার রেশ কাটতে না কাটতেই এসে যায় আর এক ঋতুর রূপের বাহার। সে রূপ
শুধু আকাশ, বাতাস আর প্রকৃতি ঘিরেই নয়_ তার ছুঁয়া লাগে প্রতিটি প্রাণের
গভীরে।
শীতের বুড়ি পালিয়ে যেতেই কালো কোকিলের কুহু স্বরে মন ভরে ওঠে আমাদের। আবার
সূর্যের প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে প্রাণিকুল। প্রকৃতিও হয়ে পড়ে কেমন
বিবর্ণ বিষণ্ন। তার পর বৈশাখ এসে ভাঙা-গড়ার খেলা খেলতে খেলতে হঠাৎ যখন
ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে, ঠিক তখনই ধূসর বরণ এলোকেশে বর্ষা এসে হাজির হয়
বাংলার আকাশে। গুড়গুড় শব্দে জানান দেয় তার আগমন বার্তা। যেনো জাদুর ছোঁয়ায়
মস্নান করে দেয় সূর্যের খরতাপ। এক ঝলকা হিমেল বাতাসের পরশ আমাদের অনুভবে
আসে। আমরা বুঝে নেই, এ আমাদের বর্ষার অকৃত্রিম ভালোবাসার পরশ।
আষাঢ় ও শ্রাবণ বর্ষা ঋতুর ভাগে পাওয়া দু'টি মাস। তাই বর্ষা এসেই বাংলার
আকাশ বাতাস আর প্রকৃতি ঘিরে জারি করে তার শাসনতন্ত্র। কালো মেঘ ধীরে ধীরে
জমাট বেঁধে ওঠে। সেই কালো মেঘের কাছে বৃষ্টি চায় চাতক পাখি। তৃষ্ণার্ত
মাঠঘাট আর বাংলার প্রতিটি প্রাণ ব্যাকুল মনে প্রতীৰায় থাকে বোবা দৃষ্টি
মেলে।
বর্ষা আমাদের প্রাণের কথা জানে, আমাদের অভাব অভিযোগের কথা জানে। তাই
বৃষ্টির নূপুর পায়ে ঝুমুর ঝুমুর তালে ঝরে পড়ে বাংলার মাটিতে। ছোট ছোট
ছেলেমেয়েরা হাসতে হাসতে ঘর ছেড়ে বাইরে এসে দাঁড়ায়। সুরে সুরে বলে- 'আয়
বৃষ্টি ঝেপে, ধান দেবো মেপে...'।
তখন পথের মানুষ আর দৌড়ে ঘরে ফিরতে চায় না। বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে তারা
ভিজতে চায়। এ যেনো বর্ষার সাথে বাংলার মানুষের অনাদিকালের সম্পর্ক। বড়
পাওয়ার জন্য ছোটখাটো ৰতি সেও যে আনন্দের। চোখের পলকে ছড়িয়ে পড়ে মেঘ। কানে
বাজে সেই চেনা গুরম্ন গুরম্ন মেঘের ডাক। আর থেকে থেকে কালো মেঘের বুক চিরে,
চোখ ঝলসানো সেই অাঁকাবাঁকা বিজলি চমক। আমাদের মনে সূচিত হয় নতুন দিনের
নতুন স্বপ্ন।
টিনের চালে ঝমঝম অবিরাম বৃষ্টির শব্দ। পৃথিবীর আর কোনো শব্দই পেঁৗছায় না
কানে। কেবল বৃষ্টির ঝম্ঝম্ শব্দ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দু'হাতে কান ঢাকে_
আবার ছাড়ে। শা-শা একটা শব্দের ঢেউ, তাদের মনকে যেনো ডেকে নিয়ে যায় স্বপ্নের
সুদূরে। এভাবে বৃষ্টির শব্দ নিয়ে খেলা চলে তাদের। কবি বলেন-
টিনের চালে গাছের ডালে
বিষ্টি ঝরে হাওয়ার তালে,
হাওয়ার তালে গাছের ডালে
বিষ্টি ঝরে তালে তালে।
জুঁই চামেলি ফুলের বোঁটায়
বিষ্টি ঝরে ফোঁটায় ফোঁটায়।
বাদলা দিনে একটানা সুর,
বিষ্টি ঝরে মিষ্টি মধুর।
গাছের চালে, পাতার ফাঁকে চুপচাপ বসে থাকে পাখিরা। জনশূন্য মাঠ-ঘাট জনশূন্য
পথ-প্রানত্দর। গোয়াল ঘরে গরম্ন আর হাম্বা রবে ডাকে না। কি এক প্রশানত্দিতে
বন্ধ চোখে জাবর কেটে চলে সারাৰণ। কখনো দেখা যায় জনশূন্য পথের ধারে দাঁড়িয়ে
বেভুলো রাখালের সাদা গাভিটি ভিজে একাকার। গাঁয়ের পুকুর অথবা নদীতে বৃষ্টির
ফোঁটায় সৃষ্টি হয় ধূসর বরণ কুয়াশা কণার। উঠোনে জমে ওঠে পানি। সে পানির ঘোলা
স্রোত নামে ঢাল বেয়ে। পুলকে আকুপাকু করে ওঠে কিশোর-কিশোরীদের মন। সহসা
খাতার কাগজ ছিঁড়ে তারা তৈরি করে কাগজের নৌকা। সে নৌকা ভাসিয়ে দেয় উঠোনের
পানিতে। নৌকা দুলে দুলে এগিয়ে যায় স্রোতের টানে। কিন্তু বৃষ্টির আঘাতে পথ
চলা বড় দায়। তাই উল্টে পড়ে পানির মধ্যে। এতেই যেনো আনন্দের সীমা থাকে না
শিশু-কিশোরদের।
বর্ষা এলেই আমাদের মনের গভীরে জেগে ওঠে সুরের কাঁপন। কেননা সুর শুনি
বৃষ্টির, সুর শুনি বাদল হাওয়ার, সুর শুনি পাতা পলস্নবের। তখন মন যেনো হয়ে
ওঠে উদাস। হারিয়ে যায় অজানা ঠিকানায়। তাই বুঝি বর্ষা কবিতার ঋতুর সুরের
স্বরলিপি। আবার প্রকৃতিকে নতুন সাজে সাজতে দেখে মনের অজানত্দেই মন, মনের
খাতায় এঁকে যায় বর্ষার মন ভুলানো সব ছবি। মেঘ, বৃষ্টি আর প্রকৃতির মায়াময়
সব দৃশ্য।
কবি বলেন_
বাদল হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলে বেলার গান,
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদে এলো বান।
এই টাপুর টুপুর বৃষ্টি ঝরতে ঝরতেই ভরে ওঠে খাল- বিল, নদী-নালা। নদীর বুকে
আবার নৌকা ভাসে। রাসত্দার পাশে ডোবা নালার ঘোলা পানিতে হাপুস হুপুস ডুব
সাঁতারে মেতে ওঠে গ্রামের ছেলেমেয়েরা। ছেলেরা বাড়ির পেছন থেকে কলা গাছ
কেটে তৈরি করে কলার ভেলা। মনের আনন্দে বেয়ে বেড়ায় ডোবা নালায়। এই ভেলা শুধু
খেলা পর্যনত্দ সীমাবদ্ধ থাকে না। মানুষের দৈনন্দিন অনেক উপকারে আসে বর্ষা
মৌসুম। এক সময় অনেক বাড়ির চারদিকে পানিতে ছয়লাব হয়ে যায়। তখন এই ভেলায় চড়ে
বড় রাসত্দায় যাওয়া-আসা করে মানুষ। আবার বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং রান্নার
পানির জন্য কোনো পুকুর বা টিউবওয়েলে যায় একাধিক কলস সাজিয়ে।
বর্ষার দিনে বৃষ্টি নামলেই মাটির গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে নানা জাতের ব্যাঙ।
শুরম্ন হয়ে যায় ব্যাঙের একটানা ঘঁ্যাঘু ঘঁ্যাঘু। ডোবা নালায় জমে ওঠা পানিতে
ওদের লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপির অনত্দ থাকে না। গলার দুদিকে নীল বলের মতো
ফুলিয়ে হলদে ব্যাঙ আর কালো ব্যাঙের এমন ডাকাডাকি শুরম্ন করে যে, রাতের বেলা
দু চোখের পাতা এক করা দায় হয়ে পড়ে। ছোট ছেলেরা পাটকাঠির মাথায় খেজুরের
কাঁটা বেঁধে ব্যাঙের পেছনে ছুটোছুটি করে বেড়ায় সকাল-সন্ধ্যায়। ব্যাঙের ছড়াও
কাটে তারা।
বর্ষাকালে ব্যাঙ নরম মাটি খুঁড়ে গোলাকার গর্ত করে সেখানে সাবু দানান মতো
অসংখ্য সাদা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো একত্রে দলা বেঁধে থাকে। আবার ডোবার কুলের
কোনো হিজল অথবা বাবলাগাছের উঁচু চিকন ডালে সাবানের ফ্যানার মতো জমাট বাঁধা
লম্বা সাদা পুঁটুলির মতো ঝুলতে দেখা যায়। সেটা এক ধরনের গেছো ব্যাঙের ডিম।
বর্ষকালে ব্যাঙের মতো মাছেরও সাড়া পড়ে যায় দেশ জুড়ে। খানা ডোবা, বিলঝিল,
নদীনালায় কাদা পানির তলায় গর্ত করে লুকিয়ে থাকা ছোট-বড় নানা জাতের মাছ
বেরিয়ে আসে এই বর্ষা মৌসুমে। ঢাল বেয়ে নানা হালকা পানির স্রোতে কৈ, শিঙ
এবং পুঁটির ঝাঁক চলে আসে ওপর দিকে। কৈ মাছ কানে হেঁটে চলে যেতে চায় কোনো বড়
জলাশয়ে। কিন্তু বৃষ্টি থেমে যেতেই ভেজা মাটির ওপর ঝাঁক বেঁধে ওরা আটকা পড়ে
যায়। তবু চলতে থাকে। এ সময় কারো চোখে পড়ে গেলে আম কুড়াবার মতো দ্রম্নত
কোঁচর ভরতে থাকে। অবস্থা বুঝে ছুটে আসে আরো অনেকেই। এভাবেই বড় নদী থেকে খাল
বেয়ে নানা জাতের মাছ এসে ছড়িয়ে পড়ে মাঠে আর গ্রামের ডোবা নালায়।
কখনো ধানের মাঠে উঠে আসা কোনো বড় মাছের পেছনে ছোটে গাঁয়ের মানুষ। তখন তাদের
হাতে শোভা পায় মাছ মারা কোচ অথবা যুতি। কিশোর ছেলেরা বড়শিতে বলস্নার টোপ
অথবা কেঁচো গেঁথে ঘোলা পানিতে মাছ ধরে।
বর্ষার দিনে আকাশ প্রায়ই মেঘে ঢাকা থাকে। কখনো কখনো সূর্যের মুখ একেবারেই
দেখা যায় না। যখন তখন মেঘ গুড়গুড় শব্দে ডেকে ওঠে এবং তার পরই অঝোর ধারায়
ঝরতে থাকে বৃষ্টি।
কিন্তু কবি মানা করলেই তো মানুষ ঘরের কোণে বসে থাকতে পারে না! বৃষ্টি ধরলে
বা আকাশ একটু ফর্সা হলেই মানুষ বেরিয়ে পড়ে যার যার কাজে। ছেলেমেয়েরাও
স্কুলে যায়। হঠাৎ বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় পথের মানুষগুলোকে। তখন তারা দৌড়ে
ঠাঁই নেয় কোনো বড় গাছের তলায়। কেউবা কলার ডগা কেটে মাথায় ধরে পথ চলতে
শুরম্ন করে। কেউবা রাসত্দার পাশ থেকে মানকচুর বড় পাতা ছিঁড়ে বৃষ্টি থেকে
রৰা করে নিজেকে। এ দৃশ্য কেবল পাড়া-গাঁয়েই চোখে পড়ে। শহরের মানুষের মতো
তাদের তো আর জনে জনে ছাতা নেই যে যাত্রাকালে ছাতা হাতে বের হবে। তা ছাড়া
গ্রামের রাসত্দায় শহরের মতো গাড়ি-ঘোড়াও নেই।
প্রতিটি গ্রামের মেঠোপথ, কাঁচা রাসত্দা এবং বাড়ির আঙিনা পর্যনত্দ কাদা
পানিতে খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। কাদা পানিতে আটকে যায় গরম্নর গাড়ি, হঠাৎ
শহর থেকে আসা কোনো মোটরগাড়ি। তখন তাদের কি যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা শুধু
ভুক্তভোগীরাই জানেন! তখন গাঁয়ের ছেলেরা দল বেঁধে কাদা-পানি মেখে অনেক
পরিশ্রম করে কাদা থেকে মুক্ত করে সেসব গাড়ি। দেখা গেলো বাড়ির কোনো খোলা
জমিতে ছেলেরা মেতে উঠেছে ফুটবল অথবা হা-ডু-ডু খেলায়। সে কি আনন্দ! খেলতে
খেলতে সবার চেহারা বীভৎস মতো হয়ে যায়। তারপর দল বেঁধে সব ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনো
পুকুরে কিংবা নদীতে। সেখানকার পানি তখন বেশ গরম গরম মনে হয়। বৃষ্টির মধ্যে
তখন আর কারো উঠতে মন চায় না সেই পানি থেকে। মানুষ বৃষ্টির মধ্যে বের হতে না
চাইলেও ঘরের খাবারের জন্য টোকা বা মাথাইল মাথায় বেঁধে বের হতে হয় তাদের।
গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে যে, শনিতে সাত, মঙ্গলে তিন_ আর সব দিন দিন।
যদি হয় মঙ্গলে শুরম্ন, তিন দিন গুরম্নগুরম্ন। বুধের সকালে নামে ঢল, বিকেলেই
বলে চল।
আষাঢ়ে ঢল নামতে নামতে এক সময় ডুবতে বসে মাঠ-ঘাট। তখন শুরম্ন হয় শ্রাবণের
রিমঝিম। একটানা ঝরছে তো ঝরছেই। সকাল সন্ধ্যা রাত, এমনিভাবে পার হয় তিনদিন,
পাঁচদিন, এমন কি সাতদিনও। তখন হাটবাজারও এক রকম বন্ধ হয়ে যায়। কেউ ঘর থেকে
বের হতে চায় না। কাঁঠাল আর আনারসের ছড়াছড়ি পথে ঘাটে।
শ্রাবণে মনে পড়ে যায় সেই কবিতার কথা_
ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি
ইলিশ মাছের ডিম,
ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি
দিনের বেলা হিম।
কিংবা_
ঝুমুর ঝুমুর
টাপুর টুপুর
বৃষ্টি নামে সকাল দুপুর...
তখন বড় নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। মাঝিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাছ বিক্রি
করে। টাটকা মাছ অথচ দাম কম। এমন দিনে সবারই মনে পড়ে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ
খাওয়ার কথা। ঘরে ঘরে তখন ভাজা ইলিশের গন্ধ। তার সাথে অন্যান্য মাছ তো আছেই।
দু'তিন দিন আর সূর্যের মুখ দেখা যায় না। মেঘের আড়াল দিয়ে প্রতিদিন সূর্যটা
পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাড়ি জমায়। অথচ কেউ তা টেরও পায় না। সে খবর পাওয়া যায়
শুধু ঘড়ির কাঁটায়। এই অফুরনত্দ অবসরে মানুষ খায় আর কাঁথা গায়ে জড়িয়ে অলস
ভঙ্গিতে শুয়ে শুয়ে সময় কাটায়। কেউবা মজার মজার সব গল্পের আসর মজায়। অনেকে
বারান্দায়, মাটিতে ঘর কেটে সাতগুটি বাঘ-বন্ধ খেলায় মেতে ওঠে। আবার অনেকে
সাদা আর কালো কচুর ডাঁটা কেটে ছোট ছোট গুটি তৈরি করে খেলে বারো প্যাতে অথবা
চবি্বশ প্যাতে। এ খেলার বেলাতেও মাটিতে ঘর কেটে নিতে হয়। বড়রা নিরিবিলি
কোনো কাচারি ঘরে গিয়ে তাস খেলতে খেলতে কাবার করে দেয় দিন। অনেক বুড়োরা আবার
পাট-টাকুরে পাটের রশি তৈরি করে দিন ভর। কেউবা বোনে ঝাঁকি জাল। আবার কেউবা
মাছ ধরার যন্ত্রপাতি তৈরি করে।
বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায় গাছপালা। তখন ভেজা মাটির
সোদাগন্ধে মন যেনো কেমন করে ওঠে। মাটি আর দেশ বড় আপন মনে হয়। হালকা রোদের
ছোঁয়ায় প্রকৃতি যেনো আনন্দে নির্ঝরের মতো হাসতে থাকে। বাড়ির আঙিনায় লক লক
করে বেড়ে ওঠে নানা ধরনের চারা জাতীয় গাছ। বৃষ্টি ঝরা সাঁঝবেলা রান্না ঘরের
মনটাকে কেমন কাছে ডাকে। উঠোনের পাশে ছোট্ট জাংলায় সবুজ লতাপাতার ফাঁকে
ফাঁকে হলুদ রঙের ঝিঙে ফুলগুলো যেনো রূপের প্রদীপ জ্বেলে চেয়ে থাকে। সে রূপ
একদিন দেখেছিলেন আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরম্নল ইসলাম।
বর্ষা ঋতুর এমন অবিরাম বর্ষণে মানুষ আবার অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আর ভালো লাগে না। এখন নতুন কিছু চাই। তাই তো কিশোর কিশোরীরা ছড়ায় ছড়ায় বলে,
লেবুর পাতা করম চা
যা বিষ্টি ঝরে চলে যা।
শাওনের মেঘ যেনো বাংলার মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে_ তাই একদিন দেখা যায়
মেঘের ফাঁকে- সূর্যটা আবার হেসে উঠেছে। ঝকমকা আলোর রশ্মি ছড়িয়ে পড়েছে
চারদিকে। পানি থইথই মাঠ ঘাট। গ্রামের অনেক বাড়িই দ্বীপের মতো দেখায়। বিল
ঝিলে ফুটে থাকে হাজারো শাপলা শালুক। সন্ধ্যায় ব্যাঙের সাথে পালস্না দিয়ে
ডাকে ঝিঁঝি পোকারা। রাতে চাঁদ হাসে আকাশে।
সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে মধুর সেই সময়ের কথা কেউ কখনো ভুলতে পারে না। যখন
মেঘমুক্ত নীল আকাশের গায়ে ভাসে চাঁদ। নিচে থই থই নদী নালা, বিলঝিল। সেই
বর্ষার পানিতে নৌকা ভাসিয়ে মনের সুখে গাঁয়ের ছেলেরা বেয়ে বেড়ায় এখানে
সেখানে। বাড়ির বৌ-ঝিরা জোছনা ঝরা রাতে নৌকা করে বেড়াতে যায় এ-পাড়া
সে-পাড়া, এ গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে।
যুবকরা ভালোলাগার এই আবেসে নৌকা বেয়ে চলে যায় কোনো বিলের মধ্যে। মনের
আনন্দে গান গায়, ভাটিয়ালি, পলস্নীগীতি অথবা মরমী। এই আনন্দ শুধু বর্ষা
মৌসুমেই।
বর্ষাকালে নতুন নতুন আনন্দের মধ্যে সময় কাটলেও কমবেশি অনেক মানুষই নানা
ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। বিশেষ করে গরিব মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না।
কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। ডুবে যায় অনেক বাড়ি। তখন তারা আশ্রয় নেয় কোনো
স্কুল ঘরে অথবা উঁচু কোনো রাসত্দার ওপর। অনেক সময় খোলা আকাশের নিচে দিন
কাটাতে হয় তাদের। তাদের থাকে না কোনো কাজ। ঘরে ঘরে দেখা দেয় জ্বালানির
অভাব। শুরম্ন হয় ছেলেমেয়েদের পেটের পীড়া, অসুখ-বিসুখ।
অতি বর্ষণে কখনো দেখা দেয় বন্যা। ডুবে যায় ফসলের মাঠ। বন-বাদারের
পোকা-মাকড়, সাপ-বিচ্ছু এসে আশ্রয় নেয় মানুষের ঘরবাড়িতে। এ সময় সাপের কামড়ে,
পানিতে ডুবে মারা যায় গ্রামের ছেলেমেয়ে। তখন লাশ কবর দেয়াও বড় দায় হয়ে
পড়ে। মাটি খুঁড়লেও তলায় জমে ওঠে পানি।
বর্ষাকালে বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। চাহিদা বেড়ে যায়
কেরোসিনের। সেই সাথে তার মূল্যটাও। অসহায় মানুষের আর কিছুই করার থাকে না।
গ্রামের মতো শহরের বসত্দিবাসীরাও এই বর্ষায় নানা সমস্যার মধ্যে পতিত হয়।
তাদেরও থাকা-খাওয়ার বড় অসুবিধা দেখা দেয়। তবু শহরের গবির ছিন্নমূল মানুষ
সরকার থেকে বেশ সাহায্য পেয়ে থাকে। কিন্তু গ্রামের মানুষ এসব থেকে বঞ্চিত_
কখনো হয় প্রতারিত। কবির ভাষায় :
ঝুমুর ঝুমুর
টাপুর টুপুর
জলে-কাদায় ঘোল,
ভাঙা ঘরে শূন্য হাঁড়ি
একটুতে খায় দোল!
একদিন আষাঢ়-শ্রাবণের দিন শেষ হয়ে যায়। প্রকৃতিকে সজীব আর মাটির প্রাণশক্তি
যুগিয়ে বর্ষা নেয় বিদায়। পানির টানে ধুয়ে মুছে যায় চারপাশের আবর্জনা। দেখতে
দেখতে মাঠের ফসল হয়ে ওঠে সবুজ আর সজীব। অনেক দানের মধ্যে বর্ষা আমাদের
মনে কিছু কষ্টের স্মৃতিও রেখে যায়। তারপর শরতের সূর্য এসে প্রকৃতিকে আবার
চঞ্চল করে তোলে। বর্ষার মতো শরৎও বাংলাকে দখল করে নেয়। মনে করিয়ে দেয় নতুন
স্বপ্নের কথা। আমরা ছয়টি ঋতুকেই সমান ভালোবাসি। ছয়টি ঋতু যেনো বাংলার ছয়টি
রঙের পাখি, ছয়টি সুরের পাখি!
নেত্রকোনা বাংলাদেশ
নেত্রকোণার ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি(র) মাজার, মোগল যুগের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ শতবর্ষী বটবৃক্ষ, সুফি আঃ জব্বার (রহ.) স্থাপিত ঐতিহাসিক বড় বাজার জামে মসজিদ। শহরে বড় বড় কয়েকটি দীঘি রয়েছে।
সৌন্দর্যের নেত্রকোনা ...

সৌন্দর্যের নেত্রকোনা ...
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথে ১৫৯ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা
লাগোয়া জেলা নেত্রকোনা। এর উত্তরে মেঘালয়ের গারো পাহাড়, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ
জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা। কংস, সোমেশ্বরী,
মগরা, ধলা প্রভৃতি এ জেলার প্রধান নদী।
বিরিসিরি আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি : জেলার দুর্গাপুর থানার বিরিসিরি ইউনিয়নে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। এখানে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদে জনগোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ : ১৯৪৬-৫০ সালে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত টঙ্ক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি থেকে কিছুটা সামনে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছু দূর এগুলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। বর্ষা মৌসুমে শোমেশ্বরী জলে পূর্ণ থাকলেও শীত মৌসুমে নদীটি পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়।
সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি : জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি। সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বর পাঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সনের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদার বাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের বংশধররা এটি পুনর্নির্মাণ করেন। এ জমিদার বাড়িটি চারটি অংশে বিভক্ত। জানা যায়, ১২৮০ মতান্তরে ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে কামরূপ কামাখ্যা থেকে শোমেশ্বর পাঠক নামে এক ব্রাহ্মণ এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন। এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। শোমেশ্বর পাঠক গারো রাজা বৈশ্যকে পরাজিত ও নিহত করে রাজ্য দখল করে নেন। সে সময়ে সুসং রাজ্যের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী ছিল আদিবাসী, যাদের অধিকাংশই আবার গারো। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছর তার বংশধররা এ অঞ্চলে জমিদারি করে।
সাধু যোসেফের ধর্মপলি : বিরিসিরি থেকে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় রানীখং গ্রাম। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপলি। রানীখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।
রাশমণি স্মৃতিসৌধ : রানীখং থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে বহেরাতলীতে আছে হাজং মাতা রাশমণি স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত কৃষক ও টঙ্ক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেত্রী হাজং মাতা রাশমণির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাশমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এখানে নির্মাণ করেছে রাশমণি স্মৃতিসৌধ।
বিজয়পুর পাহাড় : রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনা মাটির পাহাড়। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ জলাধারগুলো দেখতে চমৎকার।
নেত্রকোনার হাওর : জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দায় কমবেশি ৫৬টি হাওর ও বিল আছে। শুষ্ক মৌসুমে হাওরে চাষাবাদ হলেও বর্ষা মৌসুমে পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা। মোহনগঞ্জ শহর থেকে রিকশায় দিকলাকোনা গিয়ে এখানকার ডিঙ্গাপোতা হাওরে প্রবেশ করা যায়। এখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে হাওরের বিভিন্ন গ্রামে যাওয়া যায়। বর্ষাকালে হাওরের গ্রামগুলো একেকটি ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস ছাড়ে। নেত্রকোনা সদর থেকে দুর্গাপুর যাওয়ার বাস সার্ভিস আছে। ঢাকা থেকে সরাসরি মোহনগঞ্জ যায় ঢাকার কমলাপুর থেকে বিআরটিসি ও মহাখালী থেকে নেত্র পরিবহন, রফ রফ পরিবহন, ইকোনো পরিবহনের বাস।
কোথায় থাকবেন : দুর্গাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএর রেস্ট হাউজ। এ ছাড়া দুর্গাপুরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। হাওর অঞ্চলে থাকার কোন ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই হাওর ভ্রমণে গেলে মোহনগঞ্জ থানা শহরে থাকতে হবে। এ শহরে থাকার জন্য নিম্নমানের কিছু হোটেল আছে।
বিরিসিরি আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি : জেলার দুর্গাপুর থানার বিরিসিরি ইউনিয়নে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। এখানে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদে জনগোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ : ১৯৪৬-৫০ সালে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত টঙ্ক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি থেকে কিছুটা সামনে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছু দূর এগুলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। বর্ষা মৌসুমে শোমেশ্বরী জলে পূর্ণ থাকলেও শীত মৌসুমে নদীটি পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়।
সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি : জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি। সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বর পাঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সনের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদার বাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের বংশধররা এটি পুনর্নির্মাণ করেন। এ জমিদার বাড়িটি চারটি অংশে বিভক্ত। জানা যায়, ১২৮০ মতান্তরে ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে কামরূপ কামাখ্যা থেকে শোমেশ্বর পাঠক নামে এক ব্রাহ্মণ এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন। এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। শোমেশ্বর পাঠক গারো রাজা বৈশ্যকে পরাজিত ও নিহত করে রাজ্য দখল করে নেন। সে সময়ে সুসং রাজ্যের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী ছিল আদিবাসী, যাদের অধিকাংশই আবার গারো। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছর তার বংশধররা এ অঞ্চলে জমিদারি করে।
সাধু যোসেফের ধর্মপলি : বিরিসিরি থেকে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় রানীখং গ্রাম। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপলি। রানীখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।
রাশমণি স্মৃতিসৌধ : রানীখং থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে বহেরাতলীতে আছে হাজং মাতা রাশমণি স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত কৃষক ও টঙ্ক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেত্রী হাজং মাতা রাশমণির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাশমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এখানে নির্মাণ করেছে রাশমণি স্মৃতিসৌধ।
বিজয়পুর পাহাড় : রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনা মাটির পাহাড়। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ জলাধারগুলো দেখতে চমৎকার।
নেত্রকোনার হাওর : জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দায় কমবেশি ৫৬টি হাওর ও বিল আছে। শুষ্ক মৌসুমে হাওরে চাষাবাদ হলেও বর্ষা মৌসুমে পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা। মোহনগঞ্জ শহর থেকে রিকশায় দিকলাকোনা গিয়ে এখানকার ডিঙ্গাপোতা হাওরে প্রবেশ করা যায়। এখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে হাওরের বিভিন্ন গ্রামে যাওয়া যায়। বর্ষাকালে হাওরের গ্রামগুলো একেকটি ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস ছাড়ে। নেত্রকোনা সদর থেকে দুর্গাপুর যাওয়ার বাস সার্ভিস আছে। ঢাকা থেকে সরাসরি মোহনগঞ্জ যায় ঢাকার কমলাপুর থেকে বিআরটিসি ও মহাখালী থেকে নেত্র পরিবহন, রফ রফ পরিবহন, ইকোনো পরিবহনের বাস।
কোথায় থাকবেন : দুর্গাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএর রেস্ট হাউজ। এ ছাড়া দুর্গাপুরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। হাওর অঞ্চলে থাকার কোন ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই হাওর ভ্রমণে গেলে মোহনগঞ্জ থানা শহরে থাকতে হবে। এ শহরে থাকার জন্য নিম্নমানের কিছু হোটেল আছে।
নেত্রকোনায় কম্পিউটার শিক্ষা কার্যক্রম পিছিয়ে আছে
ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ঘোষিত হলেও নেত্রকোনা জেলার স্কুল, কলেজ ও
মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষা কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত
লক্ষ্যে এগোচ্ছে না। নেত্রকোনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা
যায়, জেলায় ২৫৩টি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, ২৯টি কলেজ, ১৭টি
কলেজ এবং ৮৯টি মাদ্রাসা রয়েছে। ২২৮টি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে ৭৮
বিদ্যালয়ে ৩৫২টি কম্পিউটার রয়েছে। এর মধ্যে ১০৩ জন শিক্ষকের পদ শূন্য। এ
ছাড়া ৪৬টি (২৯+১৭) কলেজ ও ৮৯টি মাদ্রাসায় মোট ৮৯টি কম্পিউটার রয়েছে।গত
২৬ সেপ্টেম্বর হিরণপুর উচ্চবিদ্যালয়ে বেলা পৌনে তিনটায় গিয়ে দেখা যায়,
কম্পিউটার শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান তিনজন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস করছেন।
তিনি বলেন, ‘কম্পিউটার কম থাকায় সবাইকে ব্যবহারিক ক্লাসের সুযোগ দেওয়া
যায় না।’ নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রায়হান, রুবেল ও রাজপ্রিয় জানায়,
কম্পিউটার শিখে তাদের অনেক ভালো লাগছে।হাওর অঞ্চলের খালিয়াজুরী পাইলট
উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি
জানান, তাঁর বিদ্যালয়ে গত বছর পাঁচটি কম্পিউটার দেওয়া হলেও কোনো
শিক্ষার্থী কম্পিউটার বিষয়ে পড়ছে না। আগামী বছর যাতে এ বিষয়ে পড়ে, সে
জন্য তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা শহরে অবস্থিত আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি
উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব চন্দ্র সাহা বলেন, নবম-দশম শ্রেণীতে
১৬ জন শিক্ষার্থী কম্পিউটার বিষয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে কম্পিউটারের
সিলেবাস কঠিন, তাই কম্পিউটারের বিকল্প বিষয়টির প্রতি জোর দেয়, যাতে তারা
সহজে জিপিএ-৫ পেতে পারে। তিনি কম্পিউটার শিক্ষাকে প্রয়োজনে বাধ্যতামূলক
করার পক্ষে জোর দেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন,
‘বিজ্ঞান শিক্ষার ভীতির কারণে শিক্ষার্থীর হার কম। শহরের স্কুলগুলোতে কিছু
শিক্ষার্থী কম্পিউটার পড়ছে। আশা করছি ২০১২ সালে কম্পিউটার বিষয়ে
শিক্ষার্থী বাড়বে।’— প্রথম আলো,
ইসলাম প্রচারক শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (র:)
ইসলাম প্রচারক শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (র:)
মুহাম্মদুল্লাহ নাজীব
বাংলাদেশে পীর, ফকির, অলি-আউলিয়ার আধ্যাত্মবাদের কাহিনী, কিংবদনত্মী আকারে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে, অনেক পাঠক এ সকল কাহিনী বিশ্বাস করতে চায় না। কেননা বাংলাদেশের পীর, ফকির, আউলিয়াদের
কাহিনী একজন আউলিয়ার কাহিনীর সঙ্গে অপরজনের কাহিনীর অনেকাংশে মিল খোঁজে
পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্যক্তির কাহিনী এক হওয়ার বিষয়টি অবিশ্বাস্য রূপধারণ
করে। তাই যতড়্গণ না কোন দলিল বা নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পত্রাদি দাঁড় করাতে
পারা যায় ততড়্গণ কিংবদনত্মী হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। হযরত শায়খ শাহ সুলতান
কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) এর মদনপুরে আগমন সম্পর্কেও অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। এ
নিবন্ধে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করার লড়্গ্যে কিছু সরকারী দলিলের উদ্ধৃতি
দিয়ে তার আগমন সময় সম্পর্কে নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হলঃ-
১০৮৫ হিজরী বা ১৬৭১ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের
পুত্র বাংলার সুবাদারশাহ সুজা হযরত শায়খ শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:)
মাজারের অনুকুলে যে সনদ প্রদান করে ছিলেন তার ফার্সী ভাষা থেকে বঙ্গানুবাদ
এরূপ ‘‘শাহ সুলতান রম্নমী এবং শাহ সৈয়দ সুর্খুল ও
চলিস্নশ আউলিয়া পরগনা ময়মনসিংহ জায়গীরদার সৈয়দ জালালউদ্দিন মোহাম্মদ এবং
বিচার বিভাগের শাসনকর্তা দসত্মগাহ কাজী লুৎফুলস্নাহ এবং উক্ত পরগনার হুকুমত
পানাহা মোহাম্মদ আলী বেগ প্রমুখ সকলের মোহর যুক্ত মতে এবং অন্যান্য
কর্মচারীগণের দসত্মখত সহ অদ্য তারিখ ১৬৬৫ সাল (মতানত্মরে ১৬৭১) মোতাবেক
১০৮৫ হিজরী সালে জিলক্বদ মাসে অত্র হুকুমত নামা দ্বারা স্বীকার করা হল যে
পরগনা ময়মনসিংহের বাজু হাই সরকার জায়গীরদার ছিয়াছত এবং নেজারত পানাহা সৈয়দ
জালালউদ্দিন মোহাম্মদ কর্তৃক লাখেরাজ প্রদত্ত সোনারগাঁও সরকারের অধীন
মদনপুর মৌজার হযরত শাহ সুলতান সাহেব ৪৪৫ হিজরীতে ৪০ জন দানেশ মান্দ মারেফাত
তত্ত্বজ্ঞানী সহ আগমন করেন। এই সময় মদনা নামে রাজা ঐ স‘ানে
রাজত্ব করতেন। উক্ত রাজা মৃত্যু মুখে পতিত হন এবং অন্যান্য পৌত্তলিক
কাফেরগণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। উক্ত হযরত শাহ সুলতান মদনপুর মৌজায় সঙ্গীগণ
সহ অবস‘ান করেন এবং জামেউল উলুম পরিচালনা করেন। এই মৌজায় সমসত্ম আউলিয়াগণের মাজার অবসি‘ত। এই মৌজার দরগা শরীফে খাদেমগণ বাস করিতেন। এই মৌজা সর্বপ্রকার জমা অর্থাৎ খাজনা হতে বহির্ভূত। ’’
উক্ত দলিল প্রমাণ করে যে হযরত শাহ সুলতান রম্নমী (র:) এর
মাজার নেত্রকোণায় মদনপুরে তা সুবেদার সুজার সময়েই স্বীকৃত ছিল। সম্রাট
শাহজাহানের পুত্র সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৫৮ সালে যে দলিল খানা বগুড়ার মহাস‘ানের
শাহ সুলতান নামক আউলিয়া পরিচিত ব্যক্তির মাজারের উপর সম্পাদন করেছেন তাতেও
তিনি সুষ্পষ্ট ভাবে উলেস্নখ করেন মীর সৈয়দ সুলতান মাহমুদ মাহীসোয়ার এর নাম
এবং শাহ সুজা মদনপুরের দলিলে উলেস্নখ করেন শাহ সুলতান রম্নমী এবং সৈয়দ
সুর্খুল ও চলিস্নশ আউলিয়া, সুতরাং দু’ব্যক্তি
যে ভিন্ন তার প্রমাণ ঐ দলিল সমূহেই পাওয়া যায়। তাই শাহ সুলতান যে প্রকৃতই
শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) নেত্রকোণায় মদনপুরে সমাহিত এবং মীর সৈয়দ
সুলতান মাহমুদ মাহীসোয়ার প্রকৃতই বগুড়ার মহাস‘ান গড়ের
পার্শ্বে সমাহিত এতেও কোন ভিন্ন যুক্তি নেই। শুধু শাহ সুলতান বলে যে
বিভ্রানিত্মর সৃষ্টি হয় তা বিষয়টির প্রতি অজ্ঞতার কারণেই। তেমনি ঐতিহাসিক
সাল নিয়েও বিভ্রানিত্ম রয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন।
১৩০৩ইং সালে তরপ বিজয়ী সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার সঙ্গে ১২ জন আউলিয়া
তরপে এসেছিলেন, তন্মধ্যে হযরত শাহ সুলতান একজন বলে সৈয়দ
হাসান ইমাম হোসেনী চিশতী সাহেব তার তরপের ইতিহাস নামক পুসত্মকে (পৃষ্ঠা-২৪)
উলেস্নখ করেন। তবে একথা জোর দিয়ে বলা যায় যে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন
রম্নমী (র:) ৪৪৫ হিজরীতে মদনপুরে আগমন অথবা পরলোকগমন করেন। কেননা কোন
ব্যক্তির সমাধির পার্শ্বে কোন সন তারিখ লেখা থাকলে সেটিকে তার জন্ম অথবা
মৃত্যু তারিখ হিসাবে বুঝা যায়। কোন অবস‘াতেই তার আগমনের
সন তারিখ বুঝায় না। জন্ম সন বললে বলতে হয় যেহেতু তার জন্ম এ অঞ্চলে নয়
সুতরাং তার মৃত্যুর পর জন্ম তারিখ সংগ্রহ কঠিন ব্যাপার। তাই সহজেই বুঝা যায়
এটি তার মৃত্যুর সন। আগমন ও পরলোক গমনের সনটি নিয়ে ঐতিহাসিক মতানত্মর
থাকলেও শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) এর আগমনে নেত্রকোণা তথা পূর্ব
মোমেনশাহীতে সর্বপ্রথম যে ইসলামের প্রভাব ও প্রসার সৃষ্টি হয় তাতে কোন
ঐতিহাসিক মতভেদ নেই। স্মরণযোগ্য যে, হযরত শায়খ শাহ সুলতান
কমর উদ্দীন রম্নমী এ দেশে আসার ২৫০ বছর পরে সিলেটে আগমন করেন হযরত
শাহজালাল মজররদে ইয়ামনি (র:)। অতএব শাহ সুলতান (র:) কে শাহজালাল এর সাথী
বলার কোন যুক্তিকতা নেই। যদিও সিলেটের অনেক গবেষক শাহ সুলতানকে শাহজালালের
সঙ্গী বলে উলেস্নখ করেছেন।
১০৫৩ খ্রীষ্টাব্দ, হিজরী ৪৪৫ এর পূর্বেই বোকাই কোচ, মদনকোচ, দলিপা, লড়্গণ হাজরা প্রভৃতি কোচ জাতির নেতা ও ভাটি অঞ্চল (বর্তমান খালিয়াজুরী-মোহনগঞ্জ সহ হাওর এলাকা) জিতারী নামক ড়্গত্রিয় সন্ন্যাসী, গারো পাহাড়ের তলদেশসহ আংশিক সমতল ভূমি গারো সামনত্ম রাজদের শাসনে ছিল। বর্তমান পূর্ব ময়মনসিংহ অর্থাৎ নেত্রকোণা জেলা ছিল মদনকোচ, গারো
নকমা ও খাসিয়া উপজাতীয় শাসকদের শাসনে। পূর্ব ময়মনসিংহ তথা নেত্রকোণা ছিল
কোচসহ অন্যান্য উপজাতীয় রাজাদের পৌত্তলীকতার ধর্মাবরণে বেষ্টিত। রামায়ন ও
মহাভারতের সময়কার প্রাগজ্যোতিষপুর দেশ নামে খ্যাত শাসনসীমার অংশ এই
নেত্রকোণা; সুতরাং পৌত্তলিক ধর্মাশ্রয়ীদের আবাস ভূমি ছিল এ
অঞ্চলে। হযরত শায়খ শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) সর্বপ্রথম ইসলামের
বীজরোপন করে গেছেন। পরবর্তী মুসলিম শাসকগণ তাকে লালন ও প্রসারণ করার চেষ্টা
করেছেন। সুলতানদের আমলে শুধু সুসং দূর্গাপুরের অদূরের মসজিদ খানাই নয়, মোহনগঞ্জের শেখের বাড়ির মসজিদটিও সুলতানদের ধর্মীয় অনুপ্রেরণার স্বাড়্গর। হোসেন শাহ’র
প্রতিনিধি খোয়াজ খাঁ পূর্ব মোমেনশাহী অর্থাৎ তৎকালীন মোয়াজ্জমাবাদে যে
মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি তা উদ্ধার করে ইতিহাসের একটি নতুন
দিক উন্মোচন করেছে।
পশ্চিম এশিয়ার সেলজুক রাজ বংশের তুরস্ক সুলতানের সহোদর
হযরত শায়খ শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) প্রভূত্বের শুভ্র মুকুট
পরিহার করে ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, বিলাস বসনকে তুচ্ছজ্ঞানে, বিশ্বমানব রাজ্যকে সামনে রেখে, ইসলামী
ঝান্ডাকে সমুন্নত রাখার প্রতিজ্ঞায় জন্মভূমির মায়া ছেড়ে প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে আগমন করেন। ১২০ জন সূফী সাধকের সংঘবদ্ধ
কাফেলা নিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম পদার্পণ করেন।
সেখান থেকে ১২০ জনের ঐ আউলিয়ার দলটি ধর্ম প্রচারার্থে বেশ কয়টি ভাগে বিভক্ত
হয়ে একটি দল পান্ডুয়ার রাজধানী মহাস‘ান গড় (বগুড়া)
অভিমুখে রওনা হন এবং সেখানের প্রভাবশালী রাজা পরশুরাম কে ইসলামের দাওয়াত
দেন। সে দাওয়াত পেয়ে ড়্গিপ্ত হয়ে পরশুরাম সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কথিত আছে
অতর্কিত এই যুদ্ধে ১২০ জনের দাওয়াতী দলের সেনাপতি হযরত শাহ সুলতান সৈয়দ
মাহমুদ মাহীসাওয়ার সহ শাহ কাবিল গাজী, হটিয়া গাজী, শাহ এরফান গাজী, শাহ মাসউদ গাজী, শাহ মিঞা গাজী, শাহ ফাররম্নখ প্রভৃতি ৭ (সাত) জন বীর আউলিয়া শহীদ হন। এই সেনাপতি হযরত শাহ সুলতান সৈয়দ মাহমুদ মাহী সোয়ারেরই সমাধি বগুড়ার মহাস‘ানের হযরত শাহ সুলতানের মাজার নামে পরিচিত।
হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ মাহিসোয়ারের শহীদ হওয়ার সংবাদ
পেয়ে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী অন্যত্র ইসলামের প্রচার কার্য্য
সাময়িক স‘গিত ঘোষণা করে; তার বাহিনী অর্থাৎ কায়কাউয়াস নামে আউলিয়া দল নিয়ে মহাস‘ানে গমন করেন। তিনি সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে পরশুরামকে এই মর্মে প্রসত্মাব প্রেরণ করেন যে, মিথ্যা
পৌত্তলিকতাবাদকে পরিহার করে কুসংস্কারের অন্ধকার ভেদ করে আলস্নাহর
একাত্ববাদ ও তার প্রেরিত পুরম্নষ হযরত মোহাম্মদ (সা:) কে মেনে নিতে।
এতে বিজয় উলস্নাসেরত রাজা পরশুরাম ড়্গিপ্ত হয়ে প্রেরীত
দূত হযরত তাপস মলিস্নককে বন্দী করে ফেলে। অনুন্যপায় হযরত শাহ সুলতান কমর
উদ্দিন রম্নমী (র:) রণ প্রসত্মুতি নিতে বাধ্য হয়ে রাজা পরশুরামকে আক্রমণ
করে তাকে পরাজিত ও নিহত করে সমগ্র বরেন্দ্রভূমি পদানত করেন। ইতোমধ্যেই
জয়কৃত অঞ্চলসমূহের বেশরা লোকজন দলে দলে ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে।
হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) দুই আউলিয়ার উপর
দুর্মুটের দায়িত্ব অর্পণ করে তার শিড়্গাগুরম্ন সৈয়দ মহীউদ্দিন সুর্খুল
আম্বিয়া সুরতনী (র:) সহ ৪০ জনের কায়কাউস বাহিনী নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের
পূর্বতীরে কামরূপ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পৌত্তলিক ধর্মাশ্রয়ী
সামনত্মরাজদের অঞ্চল জয় ও ইসলামের প্রচার কার্য্য সিদ্ধির জন্য অগ্রসর হয়ে
ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরের বালুর চরে এসে মাগরেবের নামাজ আদায় করেন।
তখন ছিল ব্রহ্মপুত্র বিশাল প্রশস‘ এবং এই নদ পারাপারের
কোন অবলম্বন না থাকায় ওলীগণ আধ্যাত্মিকতা বলে পাড়ি জমান এবং ব্রহ্মপুত্রের
পূর্বতীরের কোচ রাজ বোকাই কে ইসলামের পতাকা তলে সমবেত হতে প্রসত্মাব দেন।
বোকাই কোচের জ্ঞানদীপ্ত মন এই ওলীদের ত্যাগতীতিড়্গায় ও ইসলামের মর্মবাণী
শুনে সশ্রদ্ধ হয়ে উঠে তিনি সপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এই স‘ানকে
কেন্দ্র করেই পূর্ব ময়মনসিংহ তথা কামরূপ অঞ্চলে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচার
শুরম্ন হয় বলে জানা যায়। বোকাই নগর থেকে কায়কাউস বাহিনী মদন কোচের
রাজ্যাভিমুখে যাত্রা করবেন; মদন কোচ পূর্ব থেকেই এই
কায়কাউস বাহিনীর যুদ্ধ কাহিনী ও রাজা পরশুরামের পরাজয়ের কথা জানতে পায়। যখন
শুনতে পায় ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমাংশ থেকে কায়কাউস বাহিনী বিভক্ত হয়ে মাত্র
কয়েকজনের এক বাহিনী আসছে তখন মদনকোচ অনেকটা আশ্বস‘ হয়। সে খতিয়ে দেখেনি যে কায়কাউস বাহিনীর রণদড়্গ ব্যক্তিরাই এই ফকির বেশে আসছে।
হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) রাজা মদন কোচের রাজ দরবারে না গিয়ে দামচাপুর (নন্দিপুর) গ্রামে প্রথম আস‘ানা গাড়েন। কিছুদিন অবস‘ানের পর কাংসার ঘাট (সৈয়দ ফজল) নামক স‘ানে আস‘ানা স‘াপন
করেন। শেষে এই কোচ রাজ্যের রাজধানীর পশ্চিমে ঝিটাই নদীর দড়্গিণ তীরে
বিনাবাধায় প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেন ও ধ্যানমগ্ন শেষে বলেন যে, ‘‘এখানেই আমার হয়ত শেষ পর্যায় অর্থাৎ মদন কোচের রাজ্যের অভিযানই শেষ অভিযান। যে স‘ানটিতে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) নামাজ আদায় করে ছিলেন সেই স‘ানটুকু
বিনাশর্তে তাদের দান করার প্রসত্মাব দিয়ে অনুগত রূপস মলিস্নককে মদন কোচের
রাজ দরবারে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। রাজ দরবারে প্রসত্মাবটি উত্থাপন করলে
প্রথমবারে তার বোন নন্দিনীর মানব বলিদানের ভয় প্রদর্শন পূর্বক প্রত্যাখ্যান
করেন। দ্বিতীয়বার যখন একটি জায়নামাজের সমপরিমাণ স‘ানের আবেদন করা হয়, তখন
তুচ্ছ জ্ঞানে মুঞ্জুর করেন। পরড়্গণেই মদন কোচের মনে সন্দেহের উদ্রেগ ঘটল ও
সে চিনত্মা করল বিদেশীরা নিশ্চয় গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে। তৎড়্গণাৎ
সৈন্যবাহিনী নিয়ে হাজির হল দানকৃত স‘ানে।
তখন হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) আছরের নামাজ আদায় করতে ছিলেন। নামাজ শেষ হলে মদন কোচ তার সৈন্যদের জায়নামাজের নীচের স‘ান খনন করার আদেশ দিলেন, কিন‘ কোন
ধনের সন্ধান পাওয়া গেল না। হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) মদন
কোচের মনের সংশয় বুঝতে পেরে তার সংশয় অবসানের চেষ্টা করেন। তৎড়্গণাৎ
জায়নামাজ খানা শূন্যে ছুড়ে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে জায়নামাজ শূন্যে বিদ্যুৎ
বেগে সমপ্রসারিত হতে থাকে এবং অগ্নির লেলিহান শিখার ন্যায় বা হাজার হাজার
ফনাধারী সাপের মত অব্যক্ত শো শো শব্দে মদন কোচের রাজ্য আচ্ছাদিত হয়ে
অন্ধকারাচ্ছন্য হয়ে যায়। ভীত সন্ত্রস্ত্র মদন কোচ উপায় জ্ঞান শূন্য হয়ে
বাঁচার আকুতি জানায়। তখন হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) এর
প্রসত্মাব ছিল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ, বশ্যতা স্বীকার অথবা যুদ্ধ, এর
যে কোন একটি বেছে নেয়ার জন্য। মদন কোচ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথাই স্বীকার
করে। আগামী দিন তার ধর্মানত্মরীত অনুষ্ঠানে ও ভোজ সভায় যোগদানের প্রসত্মাব
দিলেন এবং সেখানেই স্বপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অঙ্গীকার করেন।
হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন (র:) প্রসত্মাব মেনে নেন।
আগামীকাল তার প্রাসাদে যাবেন ও ধর্মানত্মরীত অনুষ্ঠান ও ভোজ সভায় যোগ
দিবেন। প্রসত্মাব মাফিক জায়নামাজ স্বাভাবিক অবস‘ায় ফিরিয়ে আনেন। পরদিন সদল বলে শায়খ সুলতান রম্নমী রাজ প্রাসাদে উপসি‘ত হলেন, ধর্মানত্মরীত
অনুষ্ঠানের পূর্বেই ভোজন পর্ব তাই সন্দেহের উদ্রেগ হলো। ধ্যানমগ্ন হয়ে
আউলিয়া হযরত শাহ সুলতান (র:) চিৎকার দিয়ে সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলে
উঠলেন, এই রাজভুগে বিষ দেয়া আছে। সুতরাং কেউ খাবে না।
মদন কোচ নিজেকে সামলিয়ে রাজভুগে দেয়া চৌদ্দ তোলা
সমপরিমাণ বিষ থাকা সত্বেও অস্বীকার করে এবং শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রম্নমী
(র:)কে ওয়াদা ভঙ্গকারী হিসাবে আখ্যায়িত করে। শাহ্ সুলতান রম্নমী (র:)-এর
মনে দারম্নণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো, তিনি কখনো খেতে ওয়াদা করেননি। তখনো সত্য চাপা দিয়ে মিথ্যার আশ্রয়ে নিজেকে সঠিক বলে মদন কোচ দৃঢ় থাকলো।
তখন শুধু শাহ্ সুলতান রম্নমী (র:) নিজেই বিষ মিশ্রিত
খাবার খেয়ে ফেলেন। সৈয়দ মহিউদ্দিন সুর্খুল আম্বিয়া সুরতনী (র:)কে একটি আশা
(ষষ্ঠি) দিয়ে আধ্যাত্মিকতার পানি উত্তোলন করে জ্ঞানহীন তার দেহে ছিটিয়ে
দেবার কথা বলেন। খাবার খাওয়ার পর জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লে কথা মত সৈয়দ
মহীউদ্দিন সুর্খুল (র:) সকল কাজ শেষ করলে তিনি জ্ঞান ফিরে পান। তৎড়্গণাৎ
হযরত শাহ সুলতান কমরউদ্দিন রম্নমী (র:) এর পা জড়িয়ে ধরে ড়্গমা প্রার্থনা
করে মদন কোচ সপরিবারে ইসলাম ধর্মে দীড়্গিত হয়ে গেল।নাজীবনেট -
সবুজ পাহাড় আঁকাবাঁকা নদী_ আদিবাসীদের নতুন পৃথিবী সুসং দুর্গাপুরে বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী
সুসং দুর্গাপুর। সারিবদ্ধ সবুজ পাহাড় আঁকাবাঁকা নদী-ছড়া বেষ্টিত এক বৈচিত্র্যময় জনপদ। সোমেশ্বরীর কূল ঘেঁষে এ জনপদের ছোট্ট একটি ইউনিয়নের নাম বিরিশিরি_ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে আদিবাসীদের 'নতুন পৃথিবী'_ উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী।
নেত্রকোনা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে বিরিশিরি। ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হয় ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের শ্যামগঞ্জ বাজারে। এর পর শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়ক ধরে সোজা যাওয়া যায় বিরিশিরিতে।
নেত্রকোনা জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সংক্ষিপ্ত আকারে জেলা পরিচিতি
সংক্ষিপ্ত আকারে বাংলাদেশের বিভাগ এবং জেলা পরিচিতি'র ধারাবাহিকতায়
আজ আমরা জানবো 'নেত্রকোনা জেলা' সম্পর্কে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
# নেত্রকোনা জেলা ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
# নেত্রকোনা জেলার আয়তন ২,৪৭৭ বর্গকিলোমিটার।
# এ জেলার মোট উপজেলার সংখ্যা ১০ টি। যথা-নেত্রকোনা সদর, মোহনগঞ্জ, মদন,
খালিয়াজুরি, কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা. আটপারা, বারহাট্টা,পুর্বধলা।
# নেত্রকোনা জেলার মোট ইউনিয়ন এবং গ্রাম সংখ্যা যথাক্রমে- ১২১ টি এবং ২২৭৯ টি।
# নেত্রকোনা জেলার উল্লেখযোগ্য নদ-নদী সমূহ হচ্ছে- কংস, বাউলাই, ধনু, মুগরা,
সমেশ্বর, পাটকুরা ইত্যাদি।
# নেত্রকোনা জেলার ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান সমূহ- গারো পাহাড়,
কেন্দুয়ার রোয়াইল বাড়ী দুর্গ, খোঁজার দিঘি, দুর্গাপুরের সুসং মহারাজার বাড়ী, কমল রানীর দিঘি,
আটপাড়ার কৃষ্ণপুর বৌদ্ধমঠ, সালকি মাটিকাটা গ্রামের কুরাকীর্তি , হজরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (রহঃ) এর মাজার, কলমাকান্দা দুরগাপুরের পাহারি এলাকা ইত্যাদি।
# জনসংখ্যা মোট- ১৯,৩৭,৭৯৪, পুরুষ -৫০.৭১%, মহিলা- ৪৯.২৯%।
# শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা -বিশ্ববিদ্যালয় - ০, কলেজ -১৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় -১১১,
মাদ্রাসা - ৭৭।
# শিক্ষার হার - ৪৫.%।
# বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব- কর্নেল তাহের, খান বাহাদুর কবির উদ্দিন খান,
মুহম্মদ জাফর ইকবাল,হুমায়ুন আহমেদ,আব্দুল মোমেন বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীসভার খাদ্যমন্ত্রী, ইসলামী চিন্তাবিদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলেমেদিন আলহাজ হজরত মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, কবি নিরমলেন্দু গুণ।
# প্রধান শস্য -ধান, পাট, গম।
# রপ্তানী পণ্য -মাছ, চামড়া, ডিম ।
*************************************************************************************

এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)