ইসলাম প্রচারক শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (র:)

ইসলাম প্রচারক শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (র:)
মুহাম্মদুল্লাহ নাজীব

বাংলাদেশে পীর, ফকির, অলি-আউলিয়ার আধ্যাত্মবাদের কাহিনী, কিংবদনত্মী আকারে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে, অনেক পাঠক এ সকল কাহিনী বিশ্বাস করতে চায় না। কেননা বাংলাদেশের পীর, ফকির, আউলিয়াদের কাহিনী একজন আউলিয়ার কাহিনীর সঙ্গে অপরজনের কাহিনীর অনেকাংশে মিল খোঁজে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্যক্তির কাহিনী এক হওয়ার বিষয়টি অবিশ্বাস্য রূপধারণ করে। তাই যতড়্গণ না কোন দলিল বা নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পত্রাদি দাঁড় করাতে পারা যায় ততড়্গণ কিংবদনত্মী হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। হযরত শায়খ শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) এর মদনপুরে আগমন সম্পর্কেও অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। এ নিবন্ধে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করার লড়্গ্যে কিছু সরকারী দলিলের উদ্ধৃতি দিয়ে তার আগমন সময় সম্পর্কে নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হলঃ-
১০৮৫ হিজরী বা ১৬৭১ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের পুত্র বাংলার সুবাদারশাহ সুজা হযরত শায়খ শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) মাজারের অনুকুলে যে সনদ প্রদান করে ছিলেন তার ফার্সী ভাষা থেকে বঙ্গানুবাদ এরূপ ‘‘শাহ সুলতান রম্নমী এবং শাহ সৈয়দ সুর্খুল ও চলিস্নশ আউলিয়া পরগনা ময়মনসিংহ জায়গীরদার সৈয়দ জালালউদ্দিন মোহাম্মদ এবং বিচার বিভাগের শাসনকর্তা দসত্মগাহ কাজী লুৎফুলস্নাহ এবং উক্ত পরগনার হুকুমত পানাহা মোহাম্মদ আলী বেগ প্রমুখ সকলের মোহর যুক্ত মতে এবং অন্যান্য কর্মচারীগণের দসত্মখত সহ অদ্য তারিখ ১৬৬৫ সাল (মতানত্মরে ১৬৭১) মোতাবেক ১০৮৫ হিজরী সালে জিলক্বদ মাসে অত্র হুকুমত নামা দ্বারা স্বীকার করা হল যে পরগনা ময়মনসিংহের বাজু হাই সরকার জায়গীরদার ছিয়াছত এবং নেজারত পানাহা সৈয়দ জালালউদ্দিন মোহাম্মদ কর্তৃক লাখেরাজ প্রদত্ত সোনারগাঁও সরকারের অধীন মদনপুর মৌজার হযরত শাহ সুলতান সাহেব ৪৪৫ হিজরীতে ৪০ জন দানেশ মান্দ মারেফাত তত্ত্বজ্ঞানী সহ আগমন করেন। এই সময় মদনা নামে রাজা ঐ সানে রাজত্ব করতেন। উক্ত রাজা মৃত্যু মুখে পতিত হন এবং অন্যান্য পৌত্তলিক কাফেরগণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। উক্ত হযরত শাহ সুলতান মদনপুর মৌজায় সঙ্গীগণ সহ অবসান করেন এবং জামেউল উলুম পরিচালনা করেন। এই মৌজায় সমসত্ম আউলিয়াগণের মাজার অবসিত। এই মৌজার দরগা শরীফে খাদেমগণ বাস করিতেন। এই মৌজা সর্বপ্রকার জমা অর্থাৎ খাজনা হতে বহির্ভূত। ’’
উক্ত দলিল প্রমাণ করে যে হযরত শাহ সুলতান রম্নমী (র:) এর মাজার নেত্রকোণায় মদনপুরে তা সুবেদার সুজার সময়েই স্বীকৃত ছিল। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৫৮ সালে যে দলিল খানা বগুড়ার মহাসানের শাহ সুলতান নামক আউলিয়া পরিচিত ব্যক্তির মাজারের উপর সম্পাদন করেছেন তাতেও তিনি সুষ্পষ্ট ভাবে উলেস্নখ করেন মীর সৈয়দ সুলতান মাহমুদ মাহীসোয়ার এর নাম এবং শাহ সুজা মদনপুরের দলিলে উলেস্নখ করেন শাহ সুলতান রম্নমী এবং সৈয়দ সুর্খুল ও চলিস্নশ আউলিয়া, সুতরাং দুব্যক্তি যে ভিন্ন তার প্রমাণ ঐ দলিল সমূহেই পাওয়া যায়। তাই শাহ সুলতান যে প্রকৃতই শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) নেত্রকোণায় মদনপুরে সমাহিত এবং মীর সৈয়দ সুলতান মাহমুদ মাহীসোয়ার প্রকৃতই বগুড়ার মহাসান গড়ের পার্শ্বে সমাহিত এতেও কোন ভিন্ন যুক্তি নেই। শুধু শাহ সুলতান বলে যে বিভ্রানিত্মর সৃষ্টি হয় তা বিষয়টির প্রতি অজ্ঞতার কারণেই। তেমনি ঐতিহাসিক সাল নিয়েও বিভ্রানিত্ম রয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ১৩০৩ইং সালে তরপ বিজয়ী সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার সঙ্গে ১২ জন আউলিয়া তরপে এসেছিলেন, তন্মধ্যে হযরত শাহ সুলতান একজন বলে সৈয়দ হাসান ইমাম হোসেনী চিশতী সাহেব তার তরপের ইতিহাস নামক পুসত্মকে (পৃষ্ঠা-২৪) উলেস্নখ করেন। তবে একথা জোর দিয়ে বলা যায় যে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) ৪৪৫ হিজরীতে মদনপুরে আগমন অথবা পরলোকগমন করেন। কেননা কোন ব্যক্তির সমাধির পার্শ্বে কোন সন তারিখ লেখা থাকলে সেটিকে তার জন্ম অথবা মৃত্যু তারিখ হিসাবে বুঝা যায়। কোন অবসাতেই তার আগমনের সন তারিখ বুঝায় না। জন্ম সন বললে বলতে হয় যেহেতু তার জন্ম এ অঞ্চলে নয় সুতরাং তার মৃত্যুর পর জন্ম তারিখ সংগ্রহ কঠিন ব্যাপার। তাই সহজেই বুঝা যায় এটি তার মৃত্যুর সন। আগমন ও পরলোক গমনের সনটি নিয়ে ঐতিহাসিক মতানত্মর থাকলেও শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) এর আগমনে নেত্রকোণা তথা পূর্ব মোমেনশাহীতে সর্বপ্রথম যে ইসলামের প্রভাব ও প্রসার সৃষ্টি হয় তাতে কোন ঐতিহাসিক মতভেদ নেই। স্মরণযোগ্য যে, হযরত শায়খ শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রম্নমী এ দেশে আসার ২৫০ বছর পরে সিলেটে আগমন করেন হযরত শাহজালাল মজররদে ইয়ামনি (র:)। অতএব শাহ সুলতান (র:) কে শাহজালাল এর সাথী বলার কোন যুক্তিকতা নেই। যদিও সিলেটের অনেক গবেষক শাহ সুলতানকে শাহজালালের সঙ্গী বলে উলেস্নখ করেছেন।
১০৫৩ খ্রীষ্টাব্দ, হিজরী ৪৪৫ এর পূর্বেই বোকাই কোচ, মদনকোচ, দলিপা, লড়্গণ হাজরা প্রভৃতি কোচ জাতির নেতা ও ভাটি অঞ্চল (বর্তমান খালিয়াজুরী-মোহনগঞ্জ সহ হাওর এলাকা) জিতারী নামক ড়্গত্রিয় সন্ন্যাসী, গারো পাহাড়ের তলদেশসহ আংশিক সমতল ভূমি গারো সামনত্ম রাজদের শাসনে ছিল। বর্তমান পূর্ব ময়মনসিংহ অর্থাৎ নেত্রকোণা জেলা ছিল মদনকোচ, গারো নকমা ও খাসিয়া উপজাতীয় শাসকদের শাসনে। পূর্ব ময়মনসিংহ তথা নেত্রকোণা ছিল কোচসহ অন্যান্য উপজাতীয় রাজাদের পৌত্তলীকতার ধর্মাবরণে বেষ্টিত। রামায়ন ও মহাভারতের সময়কার প্রাগজ্যোতিষপুর দেশ নামে খ্যাত শাসনসীমার অংশ এই নেত্রকোণা; সুতরাং পৌত্তলিক ধর্মাশ্রয়ীদের আবাস ভূমি ছিল এ অঞ্চলে। হযরত শায়খ শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) সর্বপ্রথম ইসলামের বীজরোপন করে গেছেন। পরবর্তী মুসলিম শাসকগণ তাকে লালন ও প্রসারণ করার চেষ্টা করেছেন। সুলতানদের আমলে শুধু সুসং দূর্গাপুরের অদূরের মসজিদ খানাই নয়, মোহনগঞ্জের শেখের বাড়ির মসজিদটিও সুলতানদের ধর্মীয় অনুপ্রেরণার স্বাড়্গর। হোসেন শাহর প্রতিনিধি খোয়াজ খাঁ পূর্ব মোমেনশাহী অর্থাৎ তৎকালীন মোয়াজ্জমাবাদে যে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি তা উদ্ধার করে ইতিহাসের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
পশ্চিম এশিয়ার সেলজুক রাজ বংশের তুরস্ক সুলতানের সহোদর হযরত শায়খ শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) প্রভূত্বের শুভ্র মুকুট পরিহার করে ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, বিলাস বসনকে তুচ্ছজ্ঞানে, বিশ্বমানব রাজ্যকে সামনে রেখে, ইসলামী ঝান্ডাকে সমুন্নত রাখার প্রতিজ্ঞায় জন্মভূমির মায়া ছেড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে আগমন করেন। ১২০ জন সূফী সাধকের সংঘবদ্ধ কাফেলা নিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম পদার্পণ করেন। সেখান থেকে ১২০ জনের ঐ আউলিয়ার দলটি ধর্ম প্রচারার্থে বেশ কয়টি ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি দল পান্ডুয়ার রাজধানী মহাসান গড় (বগুড়া) অভিমুখে রওনা হন এবং সেখানের প্রভাবশালী রাজা পরশুরাম কে ইসলামের দাওয়াত দেন। সে দাওয়াত পেয়ে ড়্গিপ্ত হয়ে পরশুরাম সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কথিত আছে অতর্কিত এই যুদ্ধে ১২০ জনের দাওয়াতী দলের সেনাপতি হযরত শাহ সুলতান সৈয়দ মাহমুদ মাহীসাওয়ার সহ শাহ কাবিল গাজী, হটিয়া গাজী, শাহ এরফান গাজী, শাহ মাসউদ গাজী, শাহ মিঞা গাজী, শাহ ফাররম্নখ প্রভৃতি ৭ (সাত) জন বীর আউলিয়া শহীদ হন। এই সেনাপতি হযরত শাহ সুলতান সৈয়দ মাহমুদ মাহী সোয়ারেরই সমাধি বগুড়ার মহাসানের হযরত শাহ সুলতানের মাজার নামে পরিচিত।
হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ মাহিসোয়ারের শহীদ হওয়ার সংবাদ পেয়ে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী অন্যত্র ইসলামের প্রচার কার্য্য সাময়িক সগিত ঘোষণা করে; তার বাহিনী অর্থাৎ কায়কাউয়াস নামে আউলিয়া দল নিয়ে মহাসানে গমন করেন। তিনি সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে পরশুরামকে এই মর্মে প্রসত্মাব প্রেরণ করেন যে, মিথ্যা পৌত্তলিকতাবাদকে পরিহার করে কুসংস্কারের অন্ধকার ভেদ করে আলস্নাহর একাত্ববাদ ও তার প্রেরিত পুরম্নষ হযরত মোহাম্মদ (সা:) কে মেনে নিতে।
এতে বিজয় উলস্নাসেরত রাজা পরশুরাম ড়্গিপ্ত হয়ে প্রেরীত দূত হযরত তাপস মলিস্নককে বন্দী করে ফেলে। অনুন্যপায় হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) রণ প্রসত্মুতি নিতে বাধ্য হয়ে রাজা পরশুরামকে আক্রমণ করে তাকে পরাজিত ও নিহত করে সমগ্র বরেন্দ্রভূমি পদানত করেন। ইতোমধ্যেই জয়কৃত অঞ্চলসমূহের বেশরা লোকজন দলে দলে ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে।
হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) দুই আউলিয়ার উপর দুর্মুটের দায়িত্ব অর্পণ করে তার শিড়্গাগুরম্ন সৈয়দ মহীউদ্দিন সুর্খুল আম্বিয়া সুরতনী (র:) সহ ৪০ জনের কায়কাউস বাহিনী নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বতীরে কামরূপ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পৌত্তলিক ধর্মাশ্রয়ী সামনত্মরাজদের অঞ্চল জয় ও ইসলামের প্রচার কার্য্য সিদ্ধির জন্য অগ্রসর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরের বালুর চরে এসে মাগরেবের নামাজ আদায় করেন। তখন ছিল ব্রহ্মপুত্র বিশাল প্রশসএবং এই নদ পারাপারের কোন অবলম্বন না থাকায় ওলীগণ আধ্যাত্মিকতা বলে পাড়ি জমান এবং ব্রহ্মপুত্রের পূর্বতীরের কোচ রাজ বোকাই কে ইসলামের পতাকা তলে সমবেত হতে প্রসত্মাব দেন। বোকাই কোচের জ্ঞানদীপ্ত মন এই ওলীদের ত্যাগতীতিড়্গায় ও ইসলামের মর্মবাণী শুনে সশ্রদ্ধ হয়ে উঠে তিনি সপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এই সানকে কেন্দ্র করেই পূর্ব ময়মনসিংহ তথা কামরূপ অঞ্চলে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচার শুরম্ন হয় বলে জানা যায়। বোকাই নগর থেকে কায়কাউস বাহিনী মদন কোচের রাজ্যাভিমুখে যাত্রা করবেন; মদন কোচ পূর্ব থেকেই এই কায়কাউস বাহিনীর যুদ্ধ কাহিনী ও রাজা পরশুরামের পরাজয়ের কথা জানতে পায়। যখন শুনতে পায় ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমাংশ থেকে কায়কাউস বাহিনী বিভক্ত হয়ে মাত্র কয়েকজনের এক বাহিনী আসছে তখন মদনকোচ অনেকটা আশ্বসহয়। সে খতিয়ে দেখেনি যে কায়কাউস বাহিনীর রণদড়্গ ব্যক্তিরাই এই ফকির বেশে আসছে।
হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) রাজা মদন কোচের রাজ দরবারে না গিয়ে দামচাপুর (নন্দিপুর) গ্রামে প্রথম আসানা গাড়েন। কিছুদিন অবসানের পর কাংসার ঘাট (সৈয়দ ফজল) নামক সানে আসানা সাপন করেন। শেষে এই কোচ রাজ্যের রাজধানীর পশ্চিমে ঝিটাই নদীর দড়্গিণ তীরে বিনাবাধায় প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেন ও ধ্যানমগ্ন শেষে বলেন যে, ‘‘এখানেই আমার হয়ত শেষ পর্যায় অর্থাৎ মদন কোচের রাজ্যের অভিযানই শেষ অভিযান। যে সানটিতে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) নামাজ আদায় করে ছিলেন সেই সানটুকু বিনাশর্তে তাদের দান করার প্রসত্মাব দিয়ে অনুগত রূপস মলিস্নককে মদন কোচের রাজ দরবারে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। রাজ দরবারে প্রসত্মাবটি উত্থাপন করলে প্রথমবারে তার বোন নন্দিনীর মানব বলিদানের ভয় প্রদর্শন পূর্বক প্রত্যাখ্যান করেন। দ্বিতীয়বার যখন একটি জায়নামাজের সমপরিমাণ সানের আবেদন করা হয়, তখন তুচ্ছ জ্ঞানে মুঞ্জুর করেন। পরড়্গণেই মদন কোচের মনে সন্দেহের উদ্রেগ ঘটল ও সে চিনত্মা করল বিদেশীরা নিশ্চয় গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে। তৎড়্গণাৎ সৈন্যবাহিনী নিয়ে হাজির হল দানকৃত সানে।
তখন হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) আছরের নামাজ আদায় করতে ছিলেন। নামাজ শেষ হলে মদন কোচ তার সৈন্যদের জায়নামাজের নীচের সান খনন করার আদেশ দিলেন, কিনকোন ধনের সন্ধান পাওয়া গেল না। হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) মদন কোচের মনের সংশয় বুঝতে পেরে তার সংশয় অবসানের চেষ্টা করেন। তৎড়্গণাৎ জায়নামাজ খানা শূন্যে ছুড়ে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে জায়নামাজ শূন্যে বিদ্যুৎ বেগে সমপ্রসারিত হতে থাকে এবং অগ্নির লেলিহান শিখার ন্যায় বা হাজার হাজার ফনাধারী সাপের মত অব্যক্ত শো শো শব্দে মদন কোচের রাজ্য আচ্ছাদিত হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্য হয়ে যায়। ভীত সন্ত্রস্ত্র মদন কোচ উপায় জ্ঞান শূন্য হয়ে বাঁচার আকুতি জানায়। তখন হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রম্নমী (র:) এর প্রসত্মাব ছিল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ, বশ্যতা স্বীকার অথবা যুদ্ধ, এর যে কোন একটি বেছে নেয়ার জন্য। মদন কোচ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথাই স্বীকার করে। আগামী দিন তার ধর্মানত্মরীত অনুষ্ঠানে ও ভোজ সভায় যোগদানের প্রসত্মাব দিলেন এবং সেখানেই স্বপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অঙ্গীকার করেন।
হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন (র:) প্রসত্মাব মেনে নেন। আগামীকাল তার প্রাসাদে যাবেন ও ধর্মানত্মরীত অনুষ্ঠান ও ভোজ সভায় যোগ দিবেন। প্রসত্মাব মাফিক জায়নামাজ স্বাভাবিক অবসায় ফিরিয়ে আনেন। পরদিন সদল বলে শায়খ সুলতান রম্নমী রাজ প্রাসাদে উপসিত হলেন, ধর্মানত্মরীত অনুষ্ঠানের পূর্বেই ভোজন পর্ব তাই সন্দেহের উদ্রেগ হলো। ধ্যানমগ্ন হয়ে আউলিয়া হযরত শাহ সুলতান (র:) চিৎকার দিয়ে সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলে উঠলেন, এই রাজভুগে বিষ দেয়া আছে। সুতরাং কেউ খাবে না।
মদন কোচ নিজেকে সামলিয়ে রাজভুগে দেয়া চৌদ্দ তোলা সমপরিমাণ বিষ থাকা সত্বেও অস্বীকার করে এবং শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রম্নমী (র:)কে ওয়াদা ভঙ্গকারী হিসাবে আখ্যায়িত করে। শাহ্‌ সুলতান রম্নমী (র:)-এর মনে দারম্নণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো, তিনি কখনো খেতে ওয়াদা করেননি। তখনো সত্য চাপা দিয়ে মিথ্যার আশ্রয়ে নিজেকে সঠিক বলে মদন কোচ দৃঢ় থাকলো।
তখন শুধু শাহ্‌ সুলতান রম্নমী (র:) নিজেই বিষ মিশ্রিত খাবার খেয়ে ফেলেন। সৈয়দ মহিউদ্দিন সুর্খুল আম্বিয়া সুরতনী (র:)কে একটি আশা (ষষ্ঠি) দিয়ে আধ্যাত্মিকতার পানি উত্তোলন করে জ্ঞানহীন তার দেহে ছিটিয়ে দেবার কথা বলেন। খাবার খাওয়ার পর জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লে কথা মত সৈয়দ মহীউদ্দিন সুর্খুল (র:) সকল কাজ শেষ করলে তিনি জ্ঞান ফিরে পান। তৎড়্গণাৎ হযরত শাহ সুলতান কমরউদ্দিন রম্নমী (র:) এর পা জড়িয়ে ধরে ড়্গমা প্রার্থনা করে মদন কোচ সপরিবারে ইসলাম ধর্মে দীড়্গিত হয়ে গেল।
নাজীবনেট -