সুসং দুর্গাপুর। সারিবদ্ধ সবুজ পাহাড় আঁকাবাঁকা নদী-ছড়া বেষ্টিত এক বৈচিত্র্যময় জনপদ। সোমেশ্বরীর কূল ঘেঁষে এ জনপদের ছোট্ট একটি ইউনিয়নের নাম বিরিশিরি_ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে আদিবাসীদের 'নতুন পৃথিবী'_ উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী।
নেত্রকোনা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে বিরিশিরি। ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হয় ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের শ্যামগঞ্জ বাজারে। এর পর শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়ক ধরে সোজা যাওয়া যায় বিরিশিরিতে।
পাহাড়ী নদী সোমেশ্বরীর দক্ষিণ পাশের ছোট্ট একটি এলাকা বিরিশিরি। নদীর উত্তরে দুর্গাপুর সদর। অবশ্য বিরিশিরিতে যেতে মাঝপথে পাড়ি দিতে হয় 'দুর্গম গিরি কানত্দার মরু'। এবড়ো-খেবড়ো রাসত্দা এবং যন্ত্রযান থেকে বার বার ওঠা-নামার বিড়ম্বনা ক্লানত্দি বাড়িয়ে দেয়। আবার গন্তব্যে পৌঁছার পর রাসত্দার দু'পাশের বিশালাকার বৃষ্টিবৃক্ষ, কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড়ের হাতছানি, উত্তরের হিমেল হাওয়া এবং সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ জলধারা নিমিষেই দূর করে দেয় সব ক্লানত্দি। একপাশের সুদৃশ্য উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী আর অন্য পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পথিক মনকে একটু হলেও ভাবিয়ে তোলে। পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন এক পৃথিবীর সঙ্গে।
বিরিশিরিসহ সুসং দুর্গাপুর ও এর আশপাশের উপজেলা কলমাকান্দা, পূর্বধলা, হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়ায় রয়েছে গারো, হাজং, হদি, কোচ, ডালু, বানাই প্রভৃতি উপজাতিদের বসবাস। বাঙালী হিন্দু-মুসলমানদের সঙ্গে মিলে মিশে বাস করলেও এদের জীবনধারা অনেকটাই বৈচিত্র্যময়। তেমনি বৈচিত্র্যময় তাদের সংস্কৃতি_ যা নানা বাসত্দবতায় হারিয়ে যেতে বসেছে আজ। আদিবাসীদের এ বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং চর্চার লক্ষ্য নিয়েই ১৯৭৭ সালে বিরিশিরিতে সরকারী উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় উপজাতীয় কালাচারাল একাডেমী। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের গিরিবাসী নৃতাত্তি্বক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য কাজ করছে নিরলস। যাদিও অনেক প্রতিবন্ধকতাই রয়ে গেছে এখনও।
বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমীতে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটির নাম বার্ষিক আদিবাসী সাংস্কৃতিক উৎসব। এক সময় তা গারোদের 'ওয়ানগালা' নামে উদ্যাপিত হতো। পরবর্তীতে অন্যান্য উপজাতির অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে উৎসবটির নাম পাল্টে রাখা হয়। প্রতি বছর এ অনুষ্ঠানে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার গারো, হাজং, হদি, ডালু, কোচসহ আদিবাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলের মধ্যে এক মেলবন্ধন রচিত হয় উৎসবে।